অন্যান্য সাব্জেক্টের মত সাইকোলজিতেও পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বের একক আধিপত্য বলা যায়। ইসলামী জ্ঞানতত্ত্ব এখানে তেমন চর্চিত না। ইউনিভার্সিটিগুলোতে সাইকোলজির ডিপার্টমেন্টে সেকুলার ও লিবারেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়েস্টার্ন সাইকোলজিকেই প্রাধান্যতার সাথে পাঠ দান করা হয়। এখানে ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বের প্রাধান্যতা নেই।
এজন্য আধুনিক সাইকোলজিস্টদের অধিকাংশই লিবারেল চিন্তাধারার অধিকারী। তাদের পেশাগত কাজেও এজন্য এই চিন্তাচেতনার প্রতিফলন প্রকটভাবে দেখা যায়। এই অবস্থাতে যেকোন সাইকোলজিস্টদের ট্রিটমেন্ট নেয়ার আগে মুসলিমদের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
আরেকটা বিষয় হল, মানসিক ট্রিটমেন্ট ইসলামী ইতিহাসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে উলামা মাশায়েখরা যুগ যুগ ধরেই দিয়ে এসেছেন। ইসলামী শাসনব্যবস্থা পতনের পর মুসলিম সোসাইটির প্রতি ইনস্টিটিউটই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে ইউরোপীয় ইনস্টিটিউটের আধিপত্য বিস্তার হয়। এই ধারাবাহিকতায় বলা যায়, আধুনিক সময়ে এসে ইসলামী ঐতিহ্যের এই দিকটিতেও দূর্বলতা চলে আসে।
তবে এখনো পীর মাশায়েখ ও আলেম উলামাদের কাছে প্রচুর মানুষ মানসিক সমস্যা নিয়ে আসে এবং সেই সমস্যা উত্তরণের জন্য আত্মিক খোরাক ও সৎ পরামর্শ নিয়ে যায়। এটাও এক প্রকার সফল মানসিক ট্রিটমেন্ট। যেই ট্রিটমেন্টটা সম্পাদিত হয় নিরেট ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বের আলোকে।
কিন্তু পূর্বে যেমনটা বলেছি, আধুনিক সাইকোলজিতে লিবারেল দর্শনের প্রাধান্য বেশি৷ এজন্য এখানকার সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব থাকে। দেখা যায়, এখানে ফ্যামিলি, বিয়ে, সংসার, আসক্তি ইত্যাদির ব্যাপারে পজিটিভ অনেক ব্যাপার থাকে। এমনকি ধার্মিকতা ও স্পিরিচুয়ালিটিরও একটা গুরুত্ব থাকে।
তবে যেহেতু এখানে আল্লাহর শরীয়তের প্রাধান্যতা নেই, ইসলামকে একটি কমপ্লিট জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করার চেতনা নেই এবং ইসলামকে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের ভিউ থেকে দেখার পরিবর্তে কেবল কিছু পার্থিব উপকারের ভিউ থেকে দেখার প্রবণতা বেশি, ফলে শরয়ী জায়গায় এবং মানব আচরণের কিছু ডিসকাশনে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। ফলে এর সমাধান ও ট্রিটমেন্ট শরয়ী দিক থেকে সমস্যাকর হয়।
একটা উদাহরণ দেই। ধরুণ একজন মেয়ের স্বামী গাইরে মাহরাম মেয়েদের সাথে সামান্য উঠাবসা করে। বেশি না, সামান্য বলছি। কারণ বেশিটাকে আধুনিক সাইকোলজিও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। এখন সেই মেয়েটার কাছে স্বামীর এই আচরণটা ভাল লাগছে না। স্বামী এটা নিয়মিতই করে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা দ্বীনি গায়রাত এবং তার স্বাভাবিক ফিতরাতের জায়গা থেকে স্বামীর আচরণ নিতে পারছে না।
আধুনিক সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের জায়গা থেকে মেয়েটিকে হয়ত এগ্রেসিভ কিংবা ভারসাম্যহীন চিন্তার ব্যক্তি বানিয়ে দিবে। তাকে স্বামীর আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে নেয়ার চেষ্টা করতে বলবে। কিন্তু স্বামীর উক্ত আচরণকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করবে না। অথচ ইসলাম যেই সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিবে সেখানে স্বামীর কাজটি অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। মেয়েটির আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিয়ে স্বামীর সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে বলবে। ব্যবস্থা কি হবে সেটা পরের বিষয়।
আরেকটা উদাহরণ দেই। ধরুন একটা ছেলে কঠোরভাবে দ্বীন পালন করে। সে ইসলাম মানতে গিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না, কারণ সেখানে প্রকাশ্যে হারাম কাজের মহড়া হয়। সে বন্ধুদের হারাম আড্ডাগুলোলে এড়িয়ে চলে। হয়ত সে তার চারপাশের অগণিত হারাম থেকে বাঁচতে অনেক কিছুকেই এড়িয়ে চলে। আধুনিক সাইকোলজির জগতে তাকে হয়ত মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করবে। তার এসব আচরণকে এক্সট্রিম বলবে।
অর্থাৎ লিবারেল চিন্তার আধিপত্যের কারণে ইসলামের কঠিন বিধানগুলো এখানে সমস্যাজনক মনে হবে। যেই বিধানগুলো প্রচলিত দ্বীনহীন কালচারের সাথে যায় না, সেই বিধানগুলো যারা প্র্যাক্টিস করতে চাইবে, তাদেরকে কোন প্রকার মানসিক সমস্যার ক্যাটাগরিতে ফেলে দিবে।
এজন্য আধুনিক সাইকোলজির সবচেয়ে বড় দুটি প্রব্লেম হল, প্রথমত এখানে মানব আচরণ বুঝতে এবং মানসিক ট্রিটমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া জ্ঞানতত্তত্ব আরো স্পষ্ট করে বললে ইসলামী শরীয়তকে প্রধানতম উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় না।
দ্বিতীয়ত ইসলামের দাসত্ব, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের চেতনাকে মানব অস্তিত্বের মূল রহস্য হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয় না।
এজন্য বর্তমান সাইকোলজিক্যাল প্লাটফর্মের ব্যাপারে মুসলিমদের দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তাদের সাইকোলজিক্যাল জ্ঞান ও সমাধানকে চূড়ান্ত হিসেবে না দেখা। দ্বীনি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের যেকোন মতামত ও পরামর্শকে অগ্রাহ্য করা।
Ustad Iftekhar Sifat haf.
+ There are no comments
Add yours