আমাদের ক্যারিয়ার নিয়েও দেখি আজকাল সেকুলার পাড়া খুবই চিন্তিত। কনফিউজড হবার আগে কিছু জিনিস আমাদের মনে রাখা জরুরিঃ

১. আমাদের টার্গেট “আখিরাত”। দুনিয়ায় আমাদের অবস্থান, কাজ, প্রভাব… কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে কোনোই মূল্য নেই। ইভেন আমাদের নেক আমলেরও নয় (ইখলাস ছাড়া)। আল্লাহর কাছে স্ট্যান্ডার্ড হলো ঈমান ও তাকওয়া। তাই ঈমান ও তাকওয়ার বিপরীতে আমররা জীবনে কতোটুকু শাইন করতে পারলাম, আমাদের দ্বারা কতো কাজ হলো এগুলোর কোনো মূল্য নেই।

২. আমাকে দ্বারা কতোটুকু দ্বীনি কাজ হলো সেটাও আমার দেখার বিষয় নয়। আবু তালিবের মতো দ্বীনের উপকার আমি কখনোই করতে পারব না এবং এতো দ্বীনি কাজও করতে পারব না। সেই আবু তালিব তো চিরস্থায়ী জাহান্নামী। হাজার হাজার দ্বীনি কাজের পথ দেখানো লোকেরাও শুধুমাত্র নিয়্যাত বা আকিদা ভুল থাকার কারণে জাহান্নামে যেতে পারে। তাই দ্বীনি কাজ করার চেয়ে সেটুকুতে আকিদা ও ইখলাস বজায় রাখা বেশি জরুরি।

৩. আল্লাহ সাধ্যের বাহিরে কোনো কিছু নিয়ে জিগ্যেস করবেন না। হ্যাঁ, অবশ্যই অলসতা নিন্দনীয় এবং মেধা অনুযায়ী কতোটুকু পরিশ্রম ও চেষ্টা করেছে সেটা বিবেচ্য বিষয় কিন্তু এর ফলে আমার অবস্থান কি হলো, কতো প্রভাব ফেলতে পারলাম.. এগুলোর কোনোই ভ্যালু নেই। আর সেক্যুদের কাছে মূল বিষয়ই হলো দুনিয়ায় কতোটুকু অর্জন করতে পারলা ও কি করতে পারলা। যেটা আমাদের আইডিওলজির বিপরীত।

৪. আমাদের মৌলিক আকিদা, “ভাগ্য নির্ধারিত”। আমরা যতোই চেষ্টা করি আমাদের ফলাফল চেঞ্জ করতে পারব না। দুনিয়ায় কতো টুকু অর্জন করতে পারব এটা আল্লাহ অনেক আগেই আমাদের জন্য ফিক্সড করে রেখেছেন। এটাই আমাদের আকিদা ইভেন সেটা সম্মান,গ্রহণযোগ্যতা,মর্যাদা.. সবকিছুই। তাই মুসলিমরা এগুলো অর্জনের জন্য কোনো কাজ করেনা বরং আল্লাহকে খুশি করার জন্য আখিরাতকে ফোকাসে রেখে কাজ করে। এখন যারা পরবর্তিতে ব্রিলিয়ান্ট হয়েও কোনো ভালো পজিশন ক্রিয়েট করতে পারেনি সেটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য পরিক্ষা ছিলো, আর সে এতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ টানলে হয়তো অসংখ্য উদাহরণ দিবে, হতাশার জন্য দ্বীন বিমুখের। ঠিক সেরকমই দুনিয়া অর্জন করে দ্বীন ছেড়ে দিছে, বিয়ের পর দ্বীনের ফিকির কমে গেছে সেরকম উদাহরণও হাজারটা দেয়া যাবে। তাই এটা ডিপেন্ড করছে, সে আসলেই আকিদা ও দ্বীন ঠিক কতোটুকু অন্তরে ধারণ করতে পেরেছে তার ওপর।

৫. রাসূলুল্লাহ সঃ ও সাহাবী রাঃ এর দাওয়াতের পদ্ধতিও এটা যে, মানুষের গোল চেঞ্জ করে দেয়া, নিজে সেই অবস্থানে যাওয়া নয়। যেমনঃ রাসূলুল্লাহ সঃ কে মক্কার লোকেরা রাষ্ট্রপ্রধান করতে চাইলো যেটা আমাদের জামানার কোনো আলিম সেক্যু গভমেন্টের প্রেসিডেন্ট হওয়াকে নাকচ করলে সবাই “পাগল” ই বলতো। আবারো মনে রাখা জরুরি, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কতোটা চেষ্টা, পরিশ্রম ও ইকামাতে দ্বীনের জন্য চেষ্টা করেছি সেটা দ্বারাই আমাদের জাজ করা হবে।

৬. সেক্যু গভমেন্টের আন্ডারে চাইলেও ইসলামিস্টরা অনেক কিছুই করতে পারবেনা। কারণ আমাদের কাছে “সবার আগে ঈমান”। যেই পরিবেশ ও কাজের মাধ্যমে ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হয় অথবা হারামের সাথে আপোষ করে চলতে হয় সেটা মুসলিমরা কখনোই করে না। সো মুসলিমদের পক্ষে অনেক বড় বড় চাকুরী, ব্যবসা, কাজ এমনিতেই পসিবল না। এখন নিজেদের সিকিউরিটির জন্য সন্ত্রাসী আমেরিকা মুসলিমদের বাচ্চাদের হত্যা করলেই মুসলিমরা ওদের দুর্বল করার জন্য ওদের না বালক শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করতে পারেনা। এতে করে বিভিন্ন সময়ে রাসূলুল্লাহ সঃ এর মতো মুসলিমদের নিয়ে ট্রল ও বোকা, পাগল… ট্যাগ হয়তো দেয়া হবে তবে নিজেদের আদর্শে তারা অনড়। সুদভিত্তিক অর্থনীতি, ব্যাংক, বিচারপতি, অফিসারসহ আরো অনেক কিছুতেই মুসলিমরা যেতে পারেনা। সো এটা তাদের দুর্বলতা নয় বরং আদর্শ; এবং দুনিয়ার জন্য এই আদর্শের সাথে আপোষ করলে এমনেই সে ব্যর্থ। হয়তো মনে হতে পারে সে তো অনেক দ্বীনি কাজ করছে, কিন্তু আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা কি সেটাই তো দ্বীনের মূল। পশ্চিমা মডারেট শাইখদের দ্বারাও অনেক কাজ হচ্ছে, কিন্তু দিনশেষে এটা তাদের জন্য আল্লাহর ক্রোধ ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করেনা।

৭. বিজ্ঞানের উন্নতিতে মুসলিমরা এ কারণে পিছিয়ে নেয় যে, তাদের সামর্থ্য ও যোগ্যতা কমে গেছে বরং তাদের কাজগুলোকে মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা, তাদেরকে সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। একটা উদাহরণ দিলে বোঝা সহজ হবে। বাংলাদেশ তো সেক্যুলার কান্ট্রি তো এই দেশ কেনো বিজ্ঞানে পশ্চিমাদের মতো উন্নতি করতে পারতেছে না? কারণ সিস্টেম বাজে, ডোনেশন নেই, সুযোগ নেই। ঠিক সেরকমই মুসলিমদের জন্য এখন রাষ্ট্র নেই আর সুযোগ নেই (কেনোনা হারামে লিপ্ত হতে হবে)। তাই এদিকে পিছিয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

৮. একটা ক্লাসে ৫০/৬০ জনের মতো স্টুডেন্ট থাকে। যাদের মধ্যে ২/৩ জন দ্বীনি ছেলে থাকে। সো দাওয়াহ, দ্বীন নিয়ে স্টাডি ইত্যাদিতে বেশ কিছু সময় স্পেন্ড হবে এটাই স্বাভাবিক। সো পড়াশুনাতে এটার প্রভাব পরে; ধরে নিলাম এর জন্য এভারেজ স্টুডেন্টরা ব্যর্থ হয় যাদের অনেকে সফল হতে পারতো। কিন্তু কথা হলো, এই ২-৩ জনের মধ্যে হিসেব করলে কতোজন ব্যর্থ হয়, সময় নষ্ট করে, আর ওই ৫০/৬০ জনের মধ্যে কতোজন এটা করে। ৫০/৬০ জনের মধ্যে ৪০ জন ব্যর্থ হবার পর বাকি ২০ জন্য সফল হলে এই ২-৩ জনকে এখন প্রোবাবিলিটি দিয়ে হিসেব করা যাক, কতো পার্সেন্ট হবে? সো এভারেজ স্টুডেন্ট হলে বাংলাদেশের মতো কান্ট্রিগুলোতে তার প্রবলেম ফেইস করতে হবে এটাই স্বাভাবিক, আল্লাহর পক্ষ থেকে এটাই তার জন্য পরিক্ষা। যারা দ্বীনি ঘরাণার মধ্যেও আসলেই ব্রিলিয়ান্ট, তাদের কখনো ঠেকতে দেখিনি। তারা ঠিকই সফল হয়েছে এবং এই পার্সেন্ট কতো? ২-৩ জন করে ধরলে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট দশ ব্যাচে একজন? তাহলে পরিসংখ্যান ঠিকই আছে। আর ওই ৪০ জন তো ব্যর্থ হয়েছে (ম্যাক্সিমাম)। তাহলে তারা কেনো ব্যর্থ হলো? অনেকেই তো সফল হওয়া ২০-৩০ জনের চেয়েও ব্রিলিয়ান্ট ছিলো। এটা এডমিশন টেস্টের ক্ষেত্রেও সত্য।

৯. “দ্বীনি ফ্যান্টাসিতে ভুগা”। অনেকেই দেখা যাচ্ছে দ্বীনের বড় বড় বিষয়ে গাফিলতি রেখে ছোট ছোট বিষয়ে আজিমাতের ওপর আমল করতে চায়, এটাই ফ্যান্টাসি। নিজেকে ইমাম মাহদী মনে করছে, মাহদির সৈনিক মনে করছে, সবচেয়ে দৃঢ়তর ঈমানদ্বার মনে করছে অথচ তার পুরো দ্বীন অনলাইন কেন্দ্রিক। আলিমদের সোহবত ও প্র্যাকটিক্যালি মাঠে কাজ করলে ঠিকই নিজের ঈমানের হালত বুঝতে পারতো এবং সে অনুযায়ী সেক্যুলার সিস্টেমে পড়াশুনা করবে, নাকি স্কলারশীপ নিয়ে পশ্চিমা দেশে যাবে.. ইত্যাদি বুঝতে পারতো। নিজেকে দৃঢ় মুমিন ভাবা এবং আলিমদের সোহবতের অভাব। অথচ একই আলিমকে আমি দেখেছি একজনকে পশ্চিমা দেশে গিয়ে পড়াশুনা করতে বলতে, আরেকজনকে মানা করতে। এই যে দ্বীনের বুঝ পুরোপুরি পাবার আগেই বা ঈমান দৃঢ় হবার আগেই নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয় এটার জন্য এভারেজ স্টুডেন্টদের অনেকেই পরিবর্তিতে হতাশায় পরে। দ্বীনি কাজ করার পর বাকি টাইমটুকু সে ওয়েস্ট করে যেটা তার স্কিল ডেভেলাপমেন্টে প্রভাব ফেলে। তারপরও স্ট্যাটিসটিক্সটা আবারো ওপরে দেখে নিতে পারেন।

১০. আমাদের অনেক আলিম আছেন যারা জালিমদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ করেন। এদের মধ্যে অনেকের ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই স্ট্রং আবার অনেকের ব্যাকগ্রাউন্ড দুর্বল। তাই বলে কি সেই দুর্বল ব্যাকগ্রাউন্ডের আলিমরা নিজেদের আজিমাত ত্যাগ করে জালিমের সাথে আপোষ করে নিয়েছেন? না, জুলুম করে পঙ্গু করা হয়েছে, ওয়াইফকে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে, তার পুরো পরিবার ও তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়ছে, ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তার সকল সম্ভাবনা ও তার জীবনকে। কিন্তু ওনারা কি নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করেছেন? ওয়াল্লাহি, এখনও উনারা আজিমাতের ওপর আমল করেই যাচ্ছেন। ঠিক সেরকমই, দুর্বল/মাঝারি স্টুডেন্ট হলে এরকম পরিক্ষা আসবেই। তার ঈমান কতোটুকু স্ট্রং এটার ওপর ডিপেন্ড করছে সে এটা ওভারকাম করতে পারবে কিনা। আর সেটা ফ্যান্টাসি নয়, আলিমদের সোহবত ও গ্রাউন্ডে কাজ করার মাধ্যমেই বোঝা যায়। এখন যারা সারাজীবন দ্বীনি ফ্যান্টাসিতে ভুগে নিজের ঈমানকে মজবুত করেনি তারা তো হতাশায় পরবেই।

১১. যখন এডুকেশন সিস্টেমই বাজে এবং হিউজ এমাউন্টের স্টুডেন্টরা প্রতিবছর বের হয়ে হতাশার মধ্যে লাইফ লিড করতেছে এবং তাদের সংখ্যা নেহায়েতই কম না, তখন এই ধরনের লোকগুলো নিজেদের ঠিকই দ্বীনি ঘরাণার দিকে আঙ্গুল তুলতে চাইছে। অথচ স্ট্যাটিসটিক্স করলে সংখ্যাটা ঠিকই আছে। আর সেইম লেভেলের স্টুডেন্ট হওয়ায়, একজন ব্যাংকের চাকুরী পেলো আরেকজন দ্বীনি হওয়ায় ট্রাই করলো না। তখন দ্বীনি ছেলেটা তার ঈমান, আকিদা ও আমল কতোটুকু মজবুত তার ওপর ডিপেন্ড করে টিকে থাকতে পারবে কিনা। আর যদি বলেন, ব্যাংকে চাকুরী করে তাও টাকা কামাচ্ছে, ফেমিলি নিয়ে ভালো আছে ও হতাশায় নেই তাহলে কিছু বলার নাই; কারণ সে অলরেডি এই সবকিছু নিয়েই আল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করতেছে যদিও আপাতো দৃষ্টিতে মনে হতে পারে সে তো খুবই দ্বীনের কাজ করছে(?)!

বাকি প্রোডাক্টিভ হওয়া, সিস্টেমের যেখানে ব্যর্থতা সেখানে এটা থেকে বের হওয়ার উপায়ও দেশে খুব একটা এভেইলএবল না। সবাই ভার্সিটির টিচারও হতে পারবেনা। তাই স্কিল ডেভেলাপমেন্টে ফোকাস না করে, শুধু দ্বীনি কাজ করতে বলে এমন দ্বীনি ভাইকে আজ পর্যন্ত পেলাম না। যাই হোক, সমালোচনাকারীরা সমালোচনা করবেই আর সেক্যুরা মুসলিমদের দিকে আঙ্গুল তুলবেই। মুসলিমরা তাদের মতো কাজ করে যাবে, সেটা কেউ দমাতে পারবেনা। যদিও ২০১৩ এর পর অনেক খাঁটি মুসলিমরা ভার্সিটির পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছে, তবুও ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের ক্যাম্পাসগুলোতে স্ট্যাটিসটিক্স হিসেব করলেই দেখবেন সংখ্যাটা শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে; জব সেক্টরগুলোতে দ্বীনি মানুষের সংখ্যা শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে আর সেক্যুলাররাই এটা নিয়ে হতাশ। আমাদের দাওয়াতী মেহনত ঠিকই এখন ভার্সিটির পরিবেশ ছাপিয়ে অফিসারদের রিচ করা শুরু করেছে।

আর মুসলিমরা মক্কায় ও মদিনাতেও কষ্ট করেছে; দারুল কুফরে কষ্ট করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তখন সেই পরাজিত অবস্থাতেই এতো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকে শহীদও হয়েছেন। তাই মুসলিমরা আখিরাতে কি পাবে সেটাই সবসময় ফোকাসে রাখে।

সর্বশেষ মনে রাখা জরুরি সবসময়, আল্লাহর কাছে আমার মর্যাদা কেমন সেটাই সবচেয়ে মূখ্য ব্যাপার। তাকদিরের বিষয়ে সঠিক আকিদা, ঈমানকে মজবুত করা, অফলাইনে মেহনত করা আর নিয়মিত আলিমদের সোহবত ইত্যাদি ছাড়া কারো দ্বীন পরিপূর্ণ হয়না। ওয়াল্লাহি, এরপরে কাওকে রিজিকের পেরেশানিতে হতাশ হয়ে ঈমানেরর দুর্বলতা আমি এখনও দেখিনি। দুনিয়া ও আখিরাত কোনোটাতেই কাজে আসবেনা এমন আনপ্রোডাক্টিভ কখনো কোনো মুমিন হতে পারেনা

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours