প্রতিটা বিষয়ের মতো মাশওয়ারাও দুটো দিকে হতে পারে। যথাঃ দুনিয়াবী ও দ্বীনি।

.

দ্বীনি বিষয়ে অবশ্যই মাশওয়ারা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা কুরআনে আল্লাহ যেমন মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন তেমনই সীরাহ প্রতিটা পরতে পরতে আমরা এর উদাহরণ পাই। তাই দ্বীনি বিষয়ে যে কোনো কাজের জন্য বিজ্ঞ হকপন্থী উলামাদের সাথে মাশওয়ারা এবং যারা এই কাজে অভিজ্ঞ তাদের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। এতে আল্লাহর বারাকাহ যেমন থাকে তেমনই ভুল থেকেও বাঁচা যায়। আমাদের অনলাইন দুনিয়ায় এ জিনিসটার বড্ড অভাব। তবে মাশওয়ারার ধরণ কেমন হবে এবং কোন সময়ে করতে হবে এটা নিজের হিকমাহর ওপর ডিপেন্ড করে। আর হিকমাহওয়ালা হতে চাইলে হিকমাহওয়ালাদের থেকেই শিখতে হবে।

.

দুনিয়াবী বিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্যই মাশওয়ারা করা উচিৎ। কাজটা যতোটাই সিম্পল হোক না কেনো। এতে কাজটা যেমন সহজ হয়ে যায় তেমনই ভালোভাবে কাজটা সম্পন্ন করা যায়। যেমন ধরেন, আপনি এক জোড়া জুতো কিনবেন। তো যেই ভাইয়ের এটা নিয়ে বেশ জানাশুনা আছে তার সাথে মাশওয়ারা করলে সে আপনাকে কম দামে উত্তম জায়গার সন্ধান দিতে পারবে। প্রতিটা কাজই এমন সহজ থেকে সহজতর করা সম্ভব। তবে এখানেও এটা ঠিক রাখতে হবে, ‘উক্ত ব্যক্তি আসলেই এ বিষয়ে এক্সপার্ট এবং আমার প্রকৃত কল্যাণকামী কিনা’ নাহলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি

মাশওয়ারার গুরুত্ব অপরিসীম। তাবলীগের ভাইরা এই বিধানটার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকেন। তাবলীগের যতোগুলো ভালো দিক আছে, তন্মধ্যে এটা অন্যতম একটা ভালো গুণ।

.

মাশওয়ারার ফজিলত ও ফায়দা অনেক বেশি। তন্মধ্যে একটা হলো, ‘এটা লজ্জিত বা অপমানিত হওয়া থেকে রক্ষা করে’। এই কথাটা বোল্ড করে অন্তরে বসানোর মতো। নিজের জীবনে যতোবার লজ্জিত হয়েছি, যতোবার অপমানিত হয়েছি ম্যাক্সিমাম কাজই নিজে নিজে একা একা করার জন্য। এমনকি যেসব পোস্ট উস্তাদ বা কোনো হিকমাহওয়ালা ভাই এর সাথে পরামর্শ না করেই করেছি সেটার মাধ্যমেও। এই জিনিসটা নিজের জীবনের প্রতিটা পদে পদে সেট করা দরকার। আপাতো দৃষ্টিতে তেমন ইন্সট্যান্ট আউটকাম না দেখতে পেলেও এটা জীবনে অনেক ফায়দা পৌছায়। তাই মাশওয়ারা করতে পারাও একটা উত্তম গুণ

.

বদরের যুদ্ধে কুফফারদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেবার পর, নেতাদের একেকটাকে জাহান্নামে পাঠানোর পর (৭০জন), আরো ৭০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে বন্দী করে নিয়ে মুসলিমরা বিজয়ের বেশে মদীনায় ফিরে আসেন। কিন্তু সমস্যায় পরেন, বদরের আগে যুদ্ধের পারমিশন ছাড়া আর কোনো বিধান তখনও দেয়া হয়নি। সবাই তো চিন্তিত, এতোগুলো লোককে নিয়ে এখন কি করা হবে? সাইয়্যেদুল আম্বিয়া আবুল কাসেম (সঃ) সুন্নাহ অনুযায়ী সাহাবা রাঃ গণ এর সাথে মাশওয়ারায় বসলেন। একেকজন একেক রকমের মত দিলেন। তন্মধ্যে আবু বকর রাঃ এর মত ছিলো, “এরা তো আমাদেরই আত্মীয় স্বজন। তাই এদেরকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছেড়ে দেই। এরা মুক্তি পাবে, আমরাও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হবো।” অন্যদিকে উমর ইবনুল খাত্তাব ফারুক রাঃ এর অভিমত ছিলো, “এরা আবার গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে এবং আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। কাফিরদের একটাকেও বাঁচিয়ে রাখব না। যে যার নিকটাত্মীয়কে হত্যা করবে।” দয়ার নবী সঃ আবু বকর রাঃ এর মতের ওপর রায় দিলেন।

.

কিছু সময় পর উমর রাঃ রাসূলুল্লাহ সঃ এর কাছে এসে দেখেন, নবীজি সঃ ও আবু বকর রাঃ অঝোরে কান্না করতেছেন। কারণ জিগ্যাসা করে জানতে পারলেন যে, “আল্লাহর কাছে এই ফায়সালা এতোটা অপছন্দ হয়েছে যে (যদিও সেই ৭০ জনের মধ্যে পরিবর্তিতে আব্বাস রাঃ সহ আরো গণ্যমান্য সাহাবা রাঃ গণ ছিলেন), আল্লাহর আজাব খেজুর গাছের ওপর পর্যন্ত চলে এসেছিলো। শুধুমাত্র আল্লাহর ফায়সালা ও মাশওয়ারা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এটা থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে।” তাই মাশওয়ারার প্র্যাকটিস করা জরুরি। তবে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, “সেই ব্যক্তি যেনো উক্ত বিষয়ে বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ এবং কল্যাণকামী হয় (দ্বীনদার)”

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours