তাহলে ফায়সালা কি আসতেছে?
আমাদের আরো বেশি বেশি কুরবানী করা উচিৎ এবং মুমিনদের মাঝে বেশি বেশি মাংস বিতরণ করা উচিৎ! করে হিংসা আর বিদ্বেষের আগুনে নিয়ত জ্বলতে থাকা ইবলিস।

قال أرأيتك هذا الذي كرمت علي لين أخرتن إلى يوم القيامة لأختكن ذريته إلا قليل
সে (ইবলিস) বলল, “দেখুন, এ ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার ওপর সম্মান দিয়েছেন, যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেন, তবে অতি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদের অবশ্যই পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব।’
[সূরা বনী ইসরাইল, ৬২]

মানুষের মধ্যে ইবলিসের কিছু অনুসারী আছে, যারা হুবহু একই কাজ করে।

ওদের যৌনাকাঙ্ক্ষা বিকৃত। তাই মুসলিম যুবক-যুবতীদের যখন পবিত্রতা বজায় রাখতে দেখে, তখন সহ্য করতে পারে না ওরা।

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের এ ধরনের মানুষের কথা জানিয়েছেন। যেমন লূত ও তাঁর অনুসারীদের তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকেরা বলেছিল,

أخرجوهم من قريتكم إنهم أناس يتطهرون

তাদের তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’
[সূরা আল আ’রাফ, ৮২]

এরা নিজেরা অপবিত্র থাকতে থাকতে এবং খাহেশাতকে পূরণ করতে করতে একসময় কুফরে লিপ্ত হয় এবং তারা চাই অন্যরাও তাদেরই মতো হোক এবং কুফরে লিপ্ত হয়ে তাদেরই মতো প্রবৃত্তির অনুসারী হোক।
মহান আল্লাহ বলেন,

ودوا لو تكفرون كما كفروا فتكونون سواء

তারা চায় যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরী করেছে, তোমরাও তেমনি কুফরী করো, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। [তরজমা, সূরা আন-নিসা, ৮৯]

তাই মুমিনদের সতর্ক থাকা উচিৎ কাফির ও ফাসিকদের প্রতিটা চক্রান্তের ব্যাপারে। ফ্রি মিক্সিং ও হারামের সাময়িক মজা, মিডিয়া,বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো, কটু কথা বলা, বন্ধু কমে যাওয়াসহ যতো প্রকার ফিতনা আছে এগুলো যেনো কোনো মুমিনকে প্রভাবিত করতে না পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ولا يستخفئك الذين لا يوقنون

আর যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে।
[ সূরা আর-রূম, ৬০]

একদিন রাসূলুল্লাহ সঃ একটি জামাআত নিয়ে বসে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সঃ সাহাবীদের কোনো একটা বিষয় শেখাতে চাইলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, মুমিনদের সাথে মিল আছে এমন একটি গাছের নাম কি কেউ বলতে পারো? রাসূলুল্লাহ সঃ সাহাবায়ে কেরামকে কিছু শেখানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। যেমনঃ কখনো তিনি রেখা আঁকতেন,কখনো প্রশ্ন করতেন, কখনো কোনো শপথ করতেন।এর সবই ছিলো তাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অথবা বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপের জন্য। রাসূলুল্লাহ সঃ এর কথা ছিলো সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার – যা সাহাবায়ে কেরাম রা. খুব সহজেই মনে রাখতে পারতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমিও সে সময় রাসূলুল্লাহ সঃ এর সাথে ছিলাম। সাহাবীগণ মরুভূমির বিভিন্ন গাছের কথা বলে উত্তর দিচ্ছিলেন। কারণ,মরুভূমির সাথে তাদের একটা সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সঃ যে গাছের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন সেটি আমাদের পাশেই ছিলো। রাসূলুল্লাহ সঃ খেজুর গাছের কথা বলেছিলেন; কিন্তু সাহাবীগণ কেউই এটির নাম বলতে পারলেন না। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সঃ নামটি উল্ল্যেখ করলেন,এটি হচ্ছে খেজুর গাছ।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি বাড়িতে ফিরে এসে আমার পিতাকে বললাম, আমি এর উত্তর জানতাম! উমর রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তুমি বললে না কেনো? আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, সেখানে আমি ছিলাম সবার ছোট। এ ছাড়া সেখানে আবু বকর ও আপনার মতো লোকেরা উপস্থিত ছিলেন। তাই আপনার উপস্থিতিতে সেখানে উত্তর দিতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছিলো। উমর রা. বললেন, তুমি আমার জন্য যা-ই কিছু কুরবানী করো না কেনো, বরং আমি এর চেয়েও বেশি খুশি হতাম যদি তুমি রাসূলুল্লাহ সঃ এর প্রশ্নের উত্তর দিতে!

হযরত উমর রা. তার ছেলে আব্দুল্লাহকে এর দ্বারা শিক্ষা দিলেন,তোমার উত্তর দেওয়ার মতো সাহস থাকা উচিৎ- যদি তুমি সত্য জানো! লজ্জার কারণে তোমার বসে থাকা উচিৎ নয়। আমাদের সন্তানদেরকেও এমন নির্দেশনা দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি! যদি তুমি সত্য জানো, তাহলে সেটি বলতে লজ্জা বা ভয় পেয়ো না। উমর রা. আব্দুল্লাহকে এই সাহসিকতার শিক্ষাই দিয়েছিলেন। আমাদের সন্তানদেরকে এমনটা শিক্ষা দেওয়াটা জরুরি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে পিতা-মাতারা তাদের সন্তান দেরকে সাহসিকতার পরিবর্তে ভয়ের শিক্ষা দিচ্ছে। তারা শেখাচ্ছে সমস্যা থেকে দূরে থাকবে, কথা বলবে না,এটা করবে না, ওটা করবে না,মসজিদে যাবে না এসব! আমাদের উচিৎ ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে তাদেরকে সত্য তুলে ধরতে শেখানো! আমাদের উঠে দাঁড়ানো উচিৎ ফলাফল যা-ই হোক। পিতা-মাতাদের উচিৎ নয় তাদের সন্তানদেরকে ব্রয়লার মুরগির মতো গড়ে তোলা। বরং সন্তানদেরকে ইসলামের আখলাকের ওপর গড়ে তোলা উচিৎ। যাতে তারা সাহসিকতা ও ত্যাগের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়।

হযরত ইব্রাহীম আ. তার ছেলেকে বললেন, আমি তোমাকে জবাই করতে চাই! তুমি কি বলো? হযরত ইসমাইল আ. বললেন, হে আমার পিতা, আপনি তা-ই করুন, যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! তিনি প্রস্তুত ছিলেন। ইসমাইল আ. আল্লাহর জন্য জীবন দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন। আমাদের নিজেদেরকে সেভাবেই গড়ে তোলা উচিৎ এবং সন্তানদেরকেও সেভাবেই উত্তম শিক্ষা দেওয়া উচিৎ!

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours