আল্লাহর পথে “দাঈর গুণাবলী”
পর্ব -১
দাওয়াতের পদ্ধতিতে বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা নানান কারণে সৃষ্টি হতে পারে। তবে মূল কারণ হলো দাঈর ফিকির, আমল-আখলাক সুন্নত অনুযায়ী না হওয়া। ভিতরগত আরেকটি কারণ হলো – শ্রোতার প্রতি অমুখাপেক্ষিতা ও তার ব্যাপারে বেপরোয়া হওয়া।
কেউ যদি দুনিয়াবি বিষয়ে আল্লাহর জন্য মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষীতা অবলম্বন করে তাহলে সেটা তো একটি ভালো গুণ। কিন্তু এর স্থান দাওয়াতের ময়দান নয়। দাওয়াতের ময়দানে শ্রোতাদের থেকে অমুখাপেক্ষীতা কাম্য নয়। কাম্য হলো উম্মাহর জন্য কল্যাণকামীতা ও দরদ থাকা। দাঈর দুনিয়া আখেরাতের সফলতার জন্য শর্ত হলো, সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করবে। একজন দাঈ খুব করে চান মানুষ যেন তার আহবানে সাড়া দেয়। এজন্য সে তার দাওয়াতকে খুব ভালো আর উপকারী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে থাকে। তার উদাহরণ হল ওই ডাক্তারের মত, যে আন্তরিকভাবে রোগীর চিকিৎসা করে। রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করে, তার জন্য ব্যথিত হয়। রোগীর একেকবার ‘আহ’ উচ্চারণের সাথে সাথে তার অন্তর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত রোগীকে বাঁচানোর চিন্তায় অস্থির থাকে। যে সকল ডাক্তার শুধু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ঘোষণা করেই চলে যায়, সে ওই ডাক্তারের মত না। রোগীর সাথে দাঈর একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
বাড়াবাড়িতে’ আক্রান্ত ব্যক্তি তার দাওয়াত কেউ কবুল করল কি করল না – এই বিষয়ে কোন পরওয়া করে না। সে সর্বাবস্থায় নিজেকে হক মনে করে। নিজেকে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ভেবে নিয়ত ও অন্তরের অবস্থার হিসাব নেয় না। দাওয়াতের হক আদায় হলো কি না এই নিয়ে ভাবে না। দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজের কথা ও কাজের মধ্যে কোন ত্রুটি হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবে না। “কোন কাজে সুন্নতের খেলাফ হয়নি তো? “দাওয়াতের ক্ষেত্রে মূর্খতাকে মূলভিত্তি হিসেবে ধরে নেই নি তো?” “ আমার প্রকাশভঙ্গিতে বাড়াবাড়ি হয়নি তো?” – এই ধরণের ফিকির বাড়াবাড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তিতে অনুপস্থিত। সে নিজের হিসাব নেয় না।
এসকল হিসাব-নিকাশে তার কোন খেয়ালই নেই। নিজেকে সে বড় মনে করে। “সত্যকে প্রকাশ করতে হবে” এমন একটা ভাব তার মধ্যে। অথচ এটা এমন এক অনুভূতি, যা পরবর্তীতে আত্মম্ভরিতা ও অহংকারে পরিণত হয়। বাড়াবাড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তি অত্যন্ত রসকষহীনভাবে নিজের দাওয়াতের ঘোষণা দেয়। কুরআন সুন্নাহতে দাঈর যে গুণাবলী আছে সে তার পরিপূর্ণ উল্টা। নবীগণের এক এক জন মানুষকে বাঁচানোর চিন্তা থাকতো। এই উদ্দেশ্যে তারা দিন-রাত এক করে ফেলতেন। মানুষকে হেদায়াতের পথে আনার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট তারাই করেছেন। রাতে উঠে আল্লাহর কাছে মানুষের হেদায়াত চাইতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চিন্তায় এত বেশি কষ্ট করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা তার সাক্ষ্য দিয়েছেনঃ
فلعلك باخع نفسك على آثارهم إن لم يؤمنوا بهذا الحديث أسفا
অর্থঃ তারা এই বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে নিজেকে শেষ করে দিবে। [সুরা কাহাফ ১৮;৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরদটা দেখুন। সম্মুখ যুদ্ধের ময়দান। ইহুদিদের মত শত্রুর বিরুদ্ধে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তলোয়ার দিয়ে পাঠাচ্ছেন। তখনও তাকে নছিহত করছেন, “তোমার হাতে একজন মানুষের হেদায়াত পাওয়া তোমার জন্য লাল উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম”
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত দ্বিনের দাঈ হবার তাওফিক দান করুন।।।
You May Also Like:
Categories
রংপুরের তারাগঞ্জে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ
Categories
গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার অন্যতম রিজন
Categories
আমাদের নারীরা সর্বোচ্চ সম্মানিত
Categories
এক্টিভিস্টদের পারিবারিক জীবন কেমন হয়?
Categories
একাত্তরনামা
Categories
+ There are no comments
Add yours